
প্রকাশিত: Thu, Dec 8, 2022 6:54 PM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 3:06 PM
ওষুধের এক্সপায়ার ডেট নিয়ে ভুল ধারণা ও শুভঙ্করের ফাঁকি
খালিদ খলিল: ওষুধের এক্সপায়ার ডেট বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বলতে কী বোঝায়? কোনো ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কীভাবে নির্ধারণ করা হয় বা তা কতোটুকু সততা ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়? আর আসলে কি ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পর নষ্ট হয়ে যায়? ধরুন আপনি প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভুগছেন। আপনি খুঁজতে গিয়ে ড্রয়ারে দেখলেন প্যারাসিটামল রয়েছে যার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এক বছর আগে পার হয়ে গেছে। আপনি এখন কী করবেন? আপনি কি এই ওষুধ খাবেন? না খাবেন না? খেলে কি তা ভুল সিদ্ধান্ত হবে? অথবা তার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন? আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন? আপনি মারা যেতে পারেন? বা নিদেনপক্ষে আপনার মাথা ব্যথা কী ভালো হতে পারে? এ ধরনের প্রশ্ন প্রায় সব মানুষের মনে উদয় হয় এবং এর ফলে মানুষের মনে নানা ধরনের সংশয়ের সৃষ্টি হয়, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
মনে রাখবেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে এতো বিভ্রান্তির কারণ নেই, আতঙ্কেরও কারণ নেই। কারণ নাইট্রোগি�সারিন, ইনসুলিন, তরল অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কিছু সংবেদনশীল ওষুধ ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পরও কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা অনেকদিন ঠিক থাকে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে চমৎকার কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালের এক আইন মোতাবেক- ওষুধ কোম্পানিগুলো অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধের ওপর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখপূর্বক একটি সিল দিয়ে থাকে, যার মাধ্যমে বলা বা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়- এ সময়ের মধ্যে ওষুধটি গ্রহণ করা হলে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত থাকবে এবং এ সময়ের পর গ্রহণ করলে কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ নাও পাওয়া যেতে পারে।
মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সম্পর্কে একটি চমৎকার ঘটনা হলো, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অনুরোধে এফডিএ একটি গবেষণা চালায়। সেনাবাহিনীকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খুব দামি ওষুধ সংরক্ষণ করতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের এসব ওষুধ ধ্বংস করে ফেলতে হয়। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয়ে কিছু করা যায় কিনা, তা দেখা ছিলো এ গবেষণার উদ্দেশ্য। গবেষণায় দেখা যায়, ১০০টিরও বেশি ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগের ৯০ শতাংশ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হওয়ার ১৫ বছর পরও কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা ঠিক পাওয়া গিয়েছিল। এরকম আরও বেশ কিছু গবেষণায় ঠিক এ ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়।
১৯৮৬ সালে বিপুল অর্থ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনী এফডিএকে মান ঠিক থাকা ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাড়ানো যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলে; ফলে এফডিএ ও প্রতিরক্ষা বিভাগ শেলফ লাইফ এক্সটেনশন প্রোগ্রাম চালু করে। মার্শাল অ্যালেন ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই ‘প্রোপাব্লিকায় দ্য মিথ অব ড্রাগ এক্সপাইরেশন’ নামে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধটি তিনি শুরু করেন এভাবে- এফডিএ বছরের পর বছর ধরে কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার দিক থেকে বেশিরভাগ ওষুধ একদম ঠিক থাকার তথ্য জানা সত্ত্বেও হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোকে প্রতিবছর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করে ফেলতে হয়; এটা বিবেচনা করে না যে, এসব ওষুধ কতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আরও একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা- ‘একটি কালো আলমারিতে ১৪ পদের প্রেসক্রিপশন ড্রাগের একটি বাক্স ভুলে ফেলে রাখা হয়েছিল ১৯৬৯ সালের দিকে। এর মধ্যে আরও ছিলো অ্যানটিহিস্টামিন, ব্যথানাশক, উদ্দীপক জাতীয় ওষুধ।
মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হওয়ার প্রায় ৩০ বছর পর এসব ওষুধ খুঁজে পাওয়া যায়। ভাবা হয়েছিল, ওষুধগুলো নষ্ট বা বিষাক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু লী কানট্রেল ও রয় গেরনা নামের দুই গবেষক ৩০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া এসব ওষুধ পরীক্ষা করে দেখতে পান যে- এসব ওষুধের সক্রিয় উপাদান পারফেক্টলো ঠিক আছে এবং কার্যকারিতাও নষ্ট হয়নি। ওষুধগুলো ছিলো মূল বা আসল সিল দেওয়া পাত্রে। পরীক্ষার ফলাফলে তারা হতবাক হয়ে যান। ঠাণ্ডা জায়গা যেমন রেফ্রিজারেটরে ও নির্দেশিত পরিবেশে রাখা হলে ওষুধের কার্যকারিতা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পরও বহু বছর অক্ষুণ্ন থাকে। এর মানে কী এই যে, ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ বলতে আমরা যা বুঝি বা যা বোঝানো হয়, তা প্রকৃত সত্যটি প্রকাশ করছে না? এখানে কোথাও না কোথাও গলদ বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে এবং আমরা এও কী ধরে নিতে পারি, কোনো কোনো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পর গ্রহণ কার্যকারিতা বা নিরাপত্তার দিক থেকে ভয়ের কিছু নেই?
তবে উল্লিখিত সংবেদনশীল ওষুধগুলো এবং অ্যান্টিবায়োটিকসহ আরও কিছু ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পর গ্রহণ করা হলে, কার্যকারিতা না পেলে সংক্রামক রোগসহ কিছু জটিল রোগ না সারার ব্যাপারে কারও মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করাই উত্তম। আরও ক্লিয়ার করে বলি- আমেরিকার ঋউঅ বলছে, যদি চঐণঝওঈঅখখণ ওষুধ ঠিক থাকে তাহলে ঊঢচওজণ উঅঞঊ-এর পনেরো বছর বাদেও ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ওষুধের প্রতিটি স্ট্রিপে নির্দিষ্ট এক্সপায়ারি ডেট থাকে। তবে প্রশ্ন- ওষুধের ভেতরে এমনকি রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, যার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা যায় না। নির্দিষ্ট এক্সপায়ারি ডেটের আগে এই রাসায়নিক পরিবর্তনগুলো হয় না কেনো। ধরা যাক একটি ওষুধের ঊঢচওজণ উঅঞঊ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ। অর্থাৎ ওই তারিখ পর্যন্ত ওষুধটির গুণগত মান ঠিক থাকবে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। অথচ ঠিক পরের দিনই ওই ওষুধটি হয়ে যাবে অকেজো। এমন কী হতে পারে? ওষুধের যে রাসায়নিক পরিবর্তনÑ তা কী ৩১ জানুয়ারি রাত বারোটায় শেষ হয়ে যাবে এবং ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২:০১ মিনিটে ওষুধটি শুধু অকেজো নয়, প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। অবশ্যই না। এমন কিছুই হবে না। বিষয়টি হলো- এটা একটা মার্কেটিং কূটকৌশল। একটা আইনি ব্যাপারকে সুচতুর ভাবে নিজেদের কাজে লাগিয়ে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা মাত্র। ঊঢচওজণ উঅঞঊ অর্থ হলো- ঊীঢ়রৎু উধঃব ড়ভ খরপবহংব ভড়ৎ গধৎশবঃরহম ঃযব চধৎঃরপঁষধৎ চৎড়ফঁপঃ. তার মানে ঊঢচওজণ উঅঞঊ এ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ওষুধের ওই ব্যাচের মার্কেটিং লাইসেন্স শেষ হয়ে যাচ্ছে। মজার বিষয়- ঊঢচওজণ উঅঞঊ এর সাথে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবার কোনো সম্পর্ক নেই।
তাহলে কি ওষুধ নষ্ট হয় না? সেটাও তো একটা রাসায়নিক পদার্থ? অবশ্যই হয় , কিন্তু তার সাথে ঊঢচওজণ উঅঞঊ এর সম্পর্ক নেই। নিম্নমানের ঔষধ ঊঢচওজণ উঅঞঊ এর আগেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বুঝবেন কীভাবে? যদি ঔষধ গুঁড়ো হয়ে যেতে থাকে, বা ফাইল খুললেই গলে যাচ্ছে এমন হয় বা স্ট্রিপ বিবর্ণ হয়ে গেছে, এম্পলের মধ্যে যদি কিছু ভাসতে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে এই ঔষধটি ব্যবহারের অনুপযোগী এবং তা ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে ঊঢচওজণ উঅঞঊ থাকলেও তা ব্যবহার করা যাবে না।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
